শ্রীকৃষ্ণ
কৃষ্ণ: (সংস্কৃত: कृष्ण) হলেন হিন্দু ধর্মানুসারীদের আরাধ্য ভগবান । তিনি ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার রূপে খ্যাত। কখনো কখনো তাকে সর্বোচ্চ ঈশ্বর ('পরম সত্ত্বা') অভিধায় ভূষিত করা হয় এবং হিন্দুদের অন্যতম ধর্মগ্রন্থ ভগবদ্গীতার প্রবর্তক হিসাবে মান্য করা হয়। হিন্দু বর্ষপঞ্জী অনুসারে প্রতিবছর ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী (জন্মাষ্টমী) তিথিতে তার জন্মোৎসব পালন করা হয়।
দেবনাগরী: कृष्ण
অন্তর্ভুক্তি: বিষ্ণুর ৮ম অবতার
আবাস: বৃন্দাবন , গোকুল , দ্বারকা
মন্ত্র: ॐ नमो भगवते वासुदेवाय
অস্ত্র: সুদর্শন চক্র
সহোদর: বলরাম, সুভদ্রা
বাহন: গাভী (গরু)
Texts/বই: ভাগবত পুরাণ , ভগবদ্গীতা, মহাভারত
উৎসব:কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, হোলি
সঙ্গী: রাধা(প্রেমিকা); রুক্মিণী , সত্যভামা , জাম্ববতী, কালিন্দী,মিত্রবৃন্দা,নগ্নাজাতি,ভদ্রা ও লক্ষণা। উদ্ধারকৃত ১৬১০০ রাজমহিষী
মাতা-পিতা: দেবকী (মাতা)
বসুদেব (পিতা), যশোদা (পালক মাতা)
নন্দ (পালক পিতা)
হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিশেষত বৈষ্ণবদের কাছে জন্মাষ্টমী একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসব নানা ভাবে উদযাপন করা হয়। যেমন - ভগবত পুরাণ অনুযায়ী নৃত্য, নাটক যাকে বলা হয় রাসলীলা বা কৃষ্ণ লীলা, মধ্যরাত্রি তে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের মুহূর্তে ধর্মীয় গীত গাওয়া, উপবাস, দহি হান্ডি প্রভৃতি।
রাসলীলা তে মূলত শ্রীকৃষ্ণের ছোটবেলার বিভিন্ন ঘটনা দেখানো হয়।
অন্যদিকে দহি হান্ডি প্রথায় অনেক উঁচুতে মাখনের হাড়ি রাখা হয় এবং অনেক ছেলে মিলে মানুষের পিরামিড তৈরি করে সেই হাড়ি ভাঙ্গার চেষ্টা করে। তামিলনাড়ুতে এ প্রথা উড়িয়াদি নামে পরিচিত।
জন্মাষ্টমী মূলত পালন করা হয় মথুরা এবং বৃন্দাবনে। তাছাড়া মনিপুর, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, এবং ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যে যেখানে প্রচুর বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষ থাকেন সেখানে পালন করা হয়।
বিভিন্ন হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, তিনি ধর্মরাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দানকারী একজন প্রাচীন ভারতীয় রাজপুত্র ও রাজা। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীর পূর্বযুগে প্রচলিত কৃষ্ণধর্ম প্রাচীন বৈদিক ধর্মজ হয়েও খ্রিস্টীয় যুগের শুরু থেকেই ভক্তিবাদের মায়াবী চেতনায় "ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকারী" হয়ে উঠেছেন উপাস্য অবতার। ভিন্ন ধর্মের লোকেরা ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কৃষ্ণের পূজা করে থাকে।
কৃষ্ণ শব্দের অর্থ কালো বা ঘন নীল। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রে, অনেকেই কৃষ্ণ শব্দটি সর্বাকর্ষক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করেন । ভাগবত পুরাণে কৃষ্ণকে প্রায়শই বংশী-বাদনরত এক কিশোরের রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। আবার ভগবদ্গীতায়, তিনি এক পথপ্রদর্শক এবং সহায়ক তরুণ রাজপুত্র। সমগ্র মহাভারত কাব্যে, তিনি একজন কূটনীতিজ্ঞ হিসাবে পাণ্ডবপক্ষে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের রথের সারথিরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন। হিন্দু দর্শন ও ধর্মতাত্ত্বিক ঐতিহ্যে কৃষ্ণ-সংক্রান্ত উপাখ্যানগুলি বহুধা পরিব্যাপ্ত। তিনি একাধারে: শিশুদেবতা, রঙ্গকৌতুকপ্রিয়,আদর্শ প্রেমিক, দিব্য নায়ক ও সর্বোচ্চ ঈশ্বর। কৃষ্ণ-সংক্রান্ত উপাখ্যানগুলি মূলত লিখিত আছে মহাভারত, হরিবংশ, ভাগবত পুরাণ ও বিষ্ণু পুরাণ গ্রন্থে।
চতুর্থ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকেই বাসুদেব, কৃষ্ণ ও গোপাল প্রভৃতি কৃষ্ণের নানা রূপের পূজাকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতেই দক্ষিণ ভারতে কৃষ্ণভক্তি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। উত্তর ভারতে কৃষ্ণধর্ম সম্প্রদায়গুলি সুপ্রতিষ্ঠিত হয় মোটামুটি একাদশ শতাব্দী নাগাদ। দশম শতাব্দী থেকেই ভক্তি আন্দোলনের ক্রমবিস্তারের ফলে কৃষ্ণ শিল্পকলার এক মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠেন। ওড়িশায় জগন্নাথ, মহারাষ্ট্রে বিঠোবা, রাজস্থানে শ্রীনাথজি প্রভৃতি কৃষ্ণের রূপগুলিকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক ভক্তিসংস্কৃতিও বিকাশলাভ করে। তার দার্শনিক ঞ্জান ও আদর্শের উপর নজরদারি করলে সহজেই বুঝতে পারা যায় তিনি এক জন সয়ং ভগবানের অবতার ।
Comments
Post a Comment